বগুড়া প্রতিনিধি:
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রেখেছেন শিক্ষকরা। সরকারি আদেশে সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নিদের্শ রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। বৈষম্যবিরোধী কোঠা আন্দোলন চলার পাশাপাশি দেশে চলমান নানা সহিংসতা ও নাশকতার কারণে গত ১৭ জুলাই থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে সরকারের এ আদেশ উপেক্ষা উধ্বর্তন কর্মকর্তার নির্দেশে শিক্ষকরা বিদ্যালয় চালু রেখে হাজিরা দিচ্ছেন।
নন্দীগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে বিদ্যালয় খোলা রাখা হয়েছে। তবে বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থী আসবেনা শুধু শিক্ষকরা অফিস করবেন এমন আদেশ দেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার সারোয়ার জাহান।
এ বিষয়ে উক্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সারোয়ার জাহানের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, “গত ২০ জুলাই, শনিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক লিখিত আদেশে এ নির্দেশ দেয়া হয় যে, শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকবেন। তিনি বলেন লিখিত আদেশে উল্লেখ আছে বিদ্যালয় বন্ধ আছে ঠিকই কিন্তু তারপরও শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকবে।” কিন্তু শিক্ষকরা কেন প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন এর কোন কারণ জানাতে পারেননি তিনি।
তার এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে উক্ত নির্দেশনার চিঠিটি হাতে পেলে সেখানে উল্লেখ আছে “প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত আদেশের অনুবৃত্তিক্রমে চলমান পরিস্থিতিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টারসমূহের শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তি নিদের্শ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।” কিন্তু শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হবে এমন কোন তথ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে বুড়ইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাঃ শাহনাজ খানম মুঠোফোনে জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপস্থিত থাকতে হবে এমন কোন চিঠি বা নির্দেশনা কোন কিছুই নেই। কিন্তু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাদের জানিয়েছেন বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে। আর এ কারণে তারা বিদ্যালয় খোলা রাখছেন। চলমান নানা সহিংসতার কারণে শিক্ষকরা ভয়ে ভয়ে বিদ্যালয়ে আসছেন বলে জানান তিনি।
একই উপজেলার দোলাসিংড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক মুঠোফোনে জানান, “আমরা নিজেরা কোন লিখিত আদেশ না পেলেও উর্ধ্বতন কর্মকর্তার (উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার) আদেশে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকছি।”
শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের কালশীমাটি (বালক) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ সাইফুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, “উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের এক বার্তায় জানানো হয় বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ থাকবে কিন্তু শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। শিক্ষকদের হাজিরা নিশ্চিত করতে হবে।”
এছাড়াও নন্দীগ্রাম উপজেলার থালতামাজগ্রাম ইউনিয়নের বনগ্রাম সরকারি প্রাথিমকি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, “উর্ধ্বতন কর্মকতার আদেশে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে নিয়মিত যাচ্ছে কিন্তু কী কারণে বিদ্যালয়ে যেতে হচ্ছে তার কোন উত্তর তিনি দিতে পারেননি।”
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রেজোয়ান হোসেন মুঠোফোনে বলেন, “গত ২০ জুলাইয়ের এক আদেশে বিদ্যালয় বন্ধের নিদের্শ আছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য শিক্ষকদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। চলমান সহিংসতায় বিদ্যালয় যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সে জন্য শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে যাবে। নারী শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকদের কোন ক্ষতি হলে এর দায়ভার কে নিবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিজ দায়িত্বে সর্তক থেকে শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হবেন।”